যে মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর হাতের মুঠো থেকে আড়াই বছর আগে অবিশ্বাস্যভাবে ফসকে গিয়েছিল জয়, রোববার সেই মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর হাত ধরেই এলো ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি২০ জয়। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ রাতে টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ১ রানে হারের ভিলেন ছিলেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। সেদিন জয়ের জন্য ৩ বলে ২ রান প্রয়োজন ছিল। কিন্তু উচ্চাভিলাষী শট খেলে দু’জনই উইকেট ছুড়ে দিয়ে দলের হার ডেকে এনেছিলেন। কালও শেষ ওভারে উইকেটে ছিলেন তারা দু’জন। তবে আর ভুল করেননি। বরং আগের চেয়ে অনেক কঠিন পরিস্থিতি ছিল।

রিয়াদ যখন মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তখন ১৮ বলে ৩৫ রানের প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। ভারতের বোলাররা লাইন-লেন্থ বজায় রাখছিলেন বলে কাজটা বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উনিশতম ওভারের শেষ চার বলে খলিল আহমেদকে টানা চার মেরে ম্যাচ মুঠোয় নিয়ে আসেন মুশফিক। তখনই স্মৃতিপটে ভেসে উঠেছিল আড়াই বছর আগের সেই রাতের কথা। সেদিনের মতো আজও কি তারা তীরে এসে তরী ডোবাবেন! এবার ঠিকই জয় এনে দিয়েছেন। আরও একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, সে রাতের মতো জয়ের আগে উল্লসিত হননি মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। শিবম দুবের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে কোনো রান নিতে না পারার পরও মাথা গরম করেননি তারা। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় পরের বলে দুই রান নেন রিয়াদ। একটি ওয়াইডের পর তৃতীয় বলে ছয় মেরে জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক।

ভারতের বিপক্ষে এ জয়টি আরও একটি কারণে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে রীতিমতো ঝড় চলছে। ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে যার শুরু, আর সমাপ্তি সাকিবের এক বছরের নিষেধাজ্ঞায়। পারিবারিক কারণে শেষ মুহূর্তে এসে ভারত সফর থেকে সরে দাঁড়ান তামিম ইকবালও। তবে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বলতে গেলে এলোমেলো করে দেয়। ভারত যাত্রার মাত্র একদিন আগে আসে আইসিসির এই দুঃসংবাদ। সেই দুঃখ নিয়েই তারা বিধ্বস্ত মননে ভারত যান। সেখানে গিয়ে দিল্লির দূষণে জেরবার অবস্থা। সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে এ জয়ে দারুণ স্বস্তি পুরো টাইগার শিবিরেই। ৩৫ বলে ৩৯ রানের দারুণ ইনিংস খেলা সৌম্য সরকার তো জয়টি দলের সঙ্গে না আসা দুই সিনিয়র সাকিব ও তামিমকে উৎসর্গই করে বসেন, ‘আমরা সবাই শান্ত ছিলাম। জানতাম ধৈর্য ধরলে এ টার্গেট তাড়া করা সম্ভব। তাই আমরা সবাই ইতিবাচক ছিলাম। সাকিব-তামিম আমাদের অনেক অভিজ্ঞ দু’জন খেলোয়াড়। দলে সবসময় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ জয়টি আমরা তাদের উৎসর্গ করছি।’

সবচেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন মুশফিকুর রহিম। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সঞ্জয় মাঞ্জেরেকার তাকে প্রশ্ন করেন, ভারতের বিপক্ষে সবসময় ভালো খেলার রহস্য কী। স্মিত হেসে মুশফিক প্রশ্নকে একরকম এড়িয়েই যান, ‘ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে খেলাটা আমি সবসময় উপভোগ করি। বিশাল দর্শকের সামনে ভালো খেলতে পারলে খুবই ভালো লাগে। আর ক্রিকেটার হিসেবে সবসময়ই আমি উন্নতির চেষ্টা করি। আশা করি বাংলাদেশের হয়ে প্রতিটি ম্যাচেই ভালো খেলতে পারব।’

উত্তর দিন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 − ten =