গাইবান্ধা সদর এলাকার একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ৫ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ এ রায় দেন।
আসামিরা হলেন- গাইবান্ধা সদরের আব্দুল জব্বার মণ্ডল, তার ছেলে জাছিজার রহমান ওরফে খোকা, আব্দুল ওয়াহেদ মণ্ডল, মোন্তাজ আলী ব্যাপারী ওরফে মমতাজ ও রনজু মিয়া। আসামিদের মধ্যে রনজু মিয়া ছাড়া বাকি চারজন পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুন্ঠন, নির্যাতন ও দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ চার ধরনের অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, তাপস ক্রান্তি বল ও সাবিনা ইয়াসমীন খান মুন্নী। কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রনজু মিয়া এবং পলাতক চার আসামির পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আবুল হাসান।
প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৫ মে আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়। পরদিন গাইবান্ধার পুলিশ রনজু মিয়াকে গ্রেফতার করে। ২৯ মে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ছয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর এক আসামি আজগর হোসেন খান মারা যাওয়ায় ৫ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১৮ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
প্রসিকিউশন জানায়, একাত্তরের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে গাইবান্ধার সদর এলাকার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা, দৌলতপুর, মিরপুর, সাহারবাজার, কাশদহ, বিসিক শিল্পনগরী, ভবানীপুর ও চকগয়েশপুর গ্রামের ২১ জনকে হত্যা, শতাধিক বাড়ি-ঘর লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন এবং নবীর হোসেনসহ সাত নিরস্ত্র মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আসামিরা সাহাপাড়া ইউনিয়নের তিন থেকে চারশ হিন্দু লোককে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে। বিচারে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়।
আসামিরা গাইবান্ধা সদরের নান্দিদা ও ফুলবাড়ি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবং সবাই জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। তাদের মধ্যে গ্রাম্য চিকিৎসক আবদুল জব্বার মণ্ডল, জাফিজার রহমান খোকা ও আবদুল ওয়াহেদ মণ্ডল ১৯৭১ সালের আগে থেকেই জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। জব্বার ও খোকা মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৯৭২ সালে গ্রেফতার হলেও তাদের কোনো বিচার হয়নি। খোকার বর্তমান ঠিকানা রাজধানীর কাফরুল থানার উত্তর ইব্রাহিমপুর। তিনি ১৯৭৫ সালে পুলিশে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালে অবসরে যান। মমতাজ আলী বেপারী মমতাজ ১৯৭৪ সালে কৃষি বিভাগে চাকরিতে যোগ দিয়ে ২০১২ সালে অবসর নেন বলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানায়।