দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও বরিশালে আরও ৪ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০ জনে। যদিও সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১১।

২০ মাস বয়সী মেয়ে জাকিয়া জাফরিন আর স্বামী শেখ জহির রায়হানকে নিয়ে কোহিনুর আক্তারের সাজানো–গোছানো ছোট্ট সংসার ছিল। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পুলিশের বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক (এসআই) কোহিনুরের এই সাজানো সংসার শেষ হয়ে গেল। ডেঙ্গু জ্বর কেড়ে নিল কোহিনুরের জীবন।

মিরপুর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ফারজানা হোসেন রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকায় থাকতেন। তার স্বামী উপসচিব নুরুল আমিন ,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেলথ ইকোনমিকস ইউনিটে কর্মরত। নুরুল আমিন বলেন, এক সপ্তাহ আগে ডেঙ্গু ধরা পড়লে তার স্ত্রীকে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফারজানা হোসেন (৪৫) মারা যায় ।

ঢাকা মেডিকেলে মারা যাওয়া অন্যজন হলেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া গ্রামের মজিদ হাওলাদারের ছেলে লিটন হাওলাদার। ২৫ বছর বয়সি লিটন গত ২৭ জুলাই থেকে মেডিসিন বিভাগের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। সোমবার থেকে তার মধ্যে শক সিনড্রোমের উপসর্গ দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসকরা লিটনকে মৃত ঘোষণা করেন ।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া দুজন হলেন- বাকেরগঞ্জ উপজেলার নাসির খানের ছেলে আসলাম খান (২৪) ও পিরোজপুর জেলার কাউখালি উপজেলার আদম আলীর ছেলে সোহেল (১৮)। হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আসলাম এবং রাত দেড়টার দিকে সোহেল হাসপাতালে ভর্তি হন। তারা দুজনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলেন এবং দুজনের অবস্থাই ছিল গুরুতর। স্বজনদের বরাত দিয়ে পরিচালক বলেন, ‘তারা দুজনই ঢাকায় থাকতেন। অসুস্থ হওয়ার পর গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর তারা সঠিক চিকিৎসা নেননি বলেই মনে হচ্ছে। তাদের রক্তচাপ দ্রুত কমে যায় এবং এক পর্যায়ে তাদের মৃত্যু হয়।’

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ২৪ জন রোগী বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে বাকির হোসেন জানান।

প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, সঙ্গে বেড়েছে বিস্তার; দেশের ৬৪টি জেলার ৬০টিতেই এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্তরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৩৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন ৯৭৪ জন এবার বর্ষার শুরুতেই ঢাকায় মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে, এখন বিভিন্ন জেলা থেকে আক্রান্তের খবর আসছে।
মঙ্গলবার দেশের ৬০টি জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যেখানে আগের দিনও ৫০ জেলায় ডেঙ্গু রোগীর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিল তারা। বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তদের অনেকে ঢাকা থেকে রোগ নিয়ে গেছেন। তবে রাজধানীর বাইরেও এডিস মশার বিচরণ রয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আক্রান্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া ঢাকা থেকে এই রোগ নিয়ে যাওয়ায় সারা দেশেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 2 =