বিএনপি জোট ও বাম দলগুলোর আন্দোলনের হুমকিতে চিন্তিত না হলেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদ নির্বাচন ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে নানা সমালোচনা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিরোধী দলগুলো। উল্টো নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ করেও শেষ পর্যন্ত শপথ নিয়ে সংসদেও গেছেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। এতে সরকারি দল অনেকটাই স্বস্তিতে থাকলেও আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করলে তা কঠিনভাবে দমনের কথা ভাবছেন ক্ষমতাসীনরা। সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দলসহ সরকার বিরোধীরা নানাভাবে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী রোববার রাজধানীতে অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছে বাম দলগুলো। এই হরতালে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের প্রায় সব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। তাছাড়া একই ইসু্যতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচিও পালন করছে বিরোধী দলগুলো। এসব আন্দোলনের হুমকিতে উদ্বিগ্ন না হলেও সরকারি দলের নেতারা তা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা দাবি করছেন, বিএনপির আন্দোলন করার ক্ষমতা নেই। তাদের চেয়ারপারসন কারাবন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে ও শীর্ষ নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে জোরালো কোনো কর্মসূচি দলটি পালন করতে পারছে না। ঐক্যফ্রন্টেরও আন্দোলন করার মতো সক্ষমতা নেই। বিএনপি বিভিন্ন সময় জামাত-শিবিরসহ যাকে যখন পেরেছে তাকেই ধরে বাঁচতে চেয়েছে। অন্যদিকে একটু সুযোগ পেলেই এরা নাশকতার পরিকল্পনা করে। তবে সরকার তাদের ওপর তীক্ষ্ন নজর রাখছে। যাতে আন্দোলনের নামে কেউ কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান যায়যায়দিনকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করলে বিএনপির নেতাকর্মীরাই তাতে অংশ নেবেন না। এটা অতীতেও তারা দেখেছেন। বিএনপি অতীতেও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। সেগুলোতে তাদের নেতাকর্মীরাই অংশ নেননি। জনগণও তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলন করবে, তা বারবার বলেই যাচ্ছে। এখনো তারা পুরনো কথাই বলছেন। দশ বছর ধরে তাদের আন্দোলনে নামার কথা শুনে আসছেন। এখন কবে নামবে তারাই জানেন। সক্ষমতা থাকলে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনুক বিএনপি, সেটাই তারা চান। তবে বিএনপি ও বিরোধী জোট আন্দোলনের নামে আগের মতো নাশকতা চালালে তা কঠোরভাবে প্রতিহতের হুশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করে আন্দোলন করলে সে আন্দোলনকে তারা অবশ্যই অভিনন্দন জানাবেন। বিএনপির আন্দোলন যদি আগের মতো হয় জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিদের নিয়ে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, সে ক্ষেত্রে তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। উলেস্নখ্য, গত বছরের ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে বিভিন্ন সময় নানা হুমকি দিলেও কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এখন পর্যন্ত তেমন জোরালো আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট। এমন অবস্থার মধ্যে গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান দলের শীর্ষ নেতারা। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী এ আন্দোলনে শরিক হবে ২০ দলীয় জোটও। বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এদিকে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী রোববার রাজধানীতে অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করেছেন বাম দলগুলো। গত সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাম দলের এ জোটে রয়েছে সিপিবি-বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপস্নবী ওয়াকার্স পার্টিসহ আটটি দল। তাছাড়া বিএনপিসহ বেশির ভাগ বিরোধী দলই এই হরতালে সমর্থনও দিয়েছে। হরতালের সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তাদের রাজনৈতিক সহযোগী বাম দলগুলো এই অন্যায়ের প্রতিবাদে রোববার হরতাল ডেকেছে। তারা এই হরতালকে সমর্থন করছেন। তাদের হরতাল আহ্বান যৌক্তিক। হরতালের সমর্থনে সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং তার শরিক দলগুলো গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। তিনি তাদের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছেন, জনগণের ওপর সরকার যেভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ঘরের মধ্যে নয়, সবাই রাজপথে নেমে আসুন। এটা ডান-বামের প্রশ্ন নয়। এটা গ্যাসের প্রশ্ন, জনগণের প্রশ্ন, মানুষের বাঁচার প্রশ্ন। তাই সবাই মিলে আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, বাম-ডানসহ বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির ওপরই নজর রাখছে সরকার। গ্যাসের দাম বা খালেদা জিয়ার মুক্তির অযুহাত তুলে দেশে যাতে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সবোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − twelve =