বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২০-২১ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটকে ‘কল্পনাপ্রসূত’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামের বাজেট প্রকৃত অর্থে একটি অন্তসারশূন্য কল্পনাপ্রসূত কথার ফুলঝুড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়।

শুক্রবার (১২ জুন) বিকালে বাজেট নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এবারের বাজেট জনবান্ধব হয়নি। বর্তমান সরকারের কাছ থেকে অবশ্য এর বেশি কিছু আশা করেও লাভ নেই। কারণ জনগণের কাছে তাদের কোনও জবাবদিহি নেই। অর্থমন্ত্রী এই বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছেন ৮.২ শতাংশ। আমদানি, রফতানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ম্যাক্রোইকোনমিক ইনডিকেটরগুলো আলোচনা করলেই স্পষ্ট যে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত। বিনিয়োগ দরকার ৩২-৩৪ শতাংশ। যা কঠিন এবং অসম্ভব। জিডিপি ও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা দৃশ্যমানভাবেই প্রতারণার শামিল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনা সংকটের কারণে জাতি আজ এক মহাদুর্যোগকাল অতিক্রম করছে। মানুষের জীবন ও অর্থনীতিকে এ মহাসংকট থেকে উদ্ধারের জন্য যেখানে প্রয়োজন ছিল প্রথাগত গতানুগতিক বাজেট কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে একটি ‘বিশেষ করোনা বাজেট’, তা না করে অর্থমন্ত্রী গতকাল (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি গতানুগতিক অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট ঘোষণা করেছেন। এ বাজেট জাতিকে হতাশ করেছে।

তিনি বলেন, এই বাজেটে করোনা কাটিয়ে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বাজেটে বর্তমানে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কার্যকর সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বস্তরে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অথচ করোনা সংকট মোকাবেলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। উন্নয়ন খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকা করোনা সংকট মোকাবেলায় দেওয়া যেত। কারণ, উন্নয়ন খাতে শুধু লুটপাট হয়।

তিনি বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ এখনও আম্ফানের ধকল চলছে। উপকূলীয় বাঁধগুলো মেরামত হয়নি। লাখ লাখ মানুষ জলাবদ্ধ রয়েছে। কৃষকদের উৎপাদনের উপকরণ যেমন– বীজ, সার ইত্যাদির মূল্য হ্রাসের তেমন কিছুই বলা হয়নি বরঞ্চ রাসায়নিক সারের ক্ষেত্রে গত বছরের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বাজেটে স্বর্ণ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে স্বর্ণের দাম কমবে। স্বর্ণের দাম হ্রাসের এ প্রস্তাবে জুয়েলারি দোকানের লবি এবং বিত্তবানরাই লাভবান হবে। সাধারণ মানুষ এবং মধ্যবিত্তদের মধ্যে যারা সংকটকালে স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seven + 15 =