বাসাবাড়ি ও কলকারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতাল ডেকেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য এই হরতালে সমর্থন দিয়েছে। হরতালে বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা না থাকলেও আজ সকাল থেকে রাজপথে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকবে পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশ লাইন ও কন্ট্রোল রুমে রণসাজে স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে অতিরিক্ত ফোর্স। যাতে হরতালকেন্দ্রিক যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে তারা দ্রম্নততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, এর আগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম দলের ডাকা হরতালে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ সময় সুযোগ সন্ধানী একাধিক চক্র নানাভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টিরও চেষ্টা চালায়। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে রাজধানীসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে।

তবে আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল কর্মসূচি পালন করলে তাতে কোনো ধরনের বাধা দেবে না পুলিশ। বরং বিশেষ টার্গেট নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী কোনো গোষ্ঠী আন্দোলনকারীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করলে তাদের শক্ত হাতে দমন করবে তারা।

গোয়েন্দাদের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশার পাশাপাশি চাপা ক্ষোভও রয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে অনেকে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ ইসু্যটি কাজে লাগিয়ে আন্দোলন চাঙা করার চেষ্টা করতে পারে। তাই গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক রাখার সুপারিশ করেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি পদমর্যদার একজন কর্মকর্তা জানান, বিগত সময়ের মতো এবারের হরতালে রাজপথে জলকামান, রায়ট কার কিংবা দাঙ্গা পুলিশকে রণসাজে সজ্জিত রাখা হচ্ছে না। তবে যে কোনো মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে এ ধরনের সরঞ্জাম ও ফোর্স দ্রম্নত মাঠে নামাতে পারে তার পূর্ণ প্রস্তুতি থাকছে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, পল্টন ও মুক্তিভবনসহ নগরীর মাত্র ৭ পয়েন্টে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে। তবে পাড়া-মহলস্নার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে স্থানীয় থানা পুলিশ যাতে নিয়মিত টহলে থাকে সে ব্যাপারে ওসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যাতে হরতালকেন্দ্রিক কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটতে না পারে এজন্য পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে টহল ব্যবস্থা জোরদার করারও নির্দেশনা রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি পদমর্যদার একজন কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা হরতালের প্রভাব দেশের অন্য কোথাও ততটা পড়ার আশঙ্কা নেই। কেননা সেখানকার মানুষের গ্যাসের ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই এর দাম বৃদ্ধির প্রভাব তাদের ওপর পড়বে না। সে বিবেচনায় এ আন্দোলনে তাদের অংশ গ্রহণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে যাতে কোনো ষড়যন্ত্রকারী চক্র তাদের ভুল বুঝিয়ে মাঠে নামিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে এ জন্য পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে বাম দলের ডাকা হরতালে বিএনপি সমর্থন জানালেও এ আন্দোলন চাঙা করতে তারা রাজপথে নেমে পিকেটিং করবে- এমন আশঙ্কা খুবই কম বলে মনে করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা মনে করেন, বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মীই এখন নিষ্ক্রিয়। এছাড়া এ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য দলের হাইকমান্ড থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তাই তাদের বিষয়ে পুলিশ ততটা উদ্বিগ্ন নয়।

অন্যদিকে হরতালের দিন সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা থাকায় এসব পরিবহন শ্রমিকরা যাতে হরতালকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় অংশ না নেয় সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে নজরদারিতে রাখার তাগিদ দিয়েছে গোয়েন্দারা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সায়েদাবাদ-কুড়িল বিশ্বরোডের বেশ কয়েকটি পয়েন্ট তারা স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে স্ট্যান্ডবাই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ওইসব এলাকার টহল জোরদার করার নির্দেশনা রয়েছে।

হরতাল সফলের আহ্বান

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আজকের হরতাল সফল করতে দেশের সবাইকে এতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গণশুনানিতে তাদের বক্তব্য অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) অযৌক্তিভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। সিএনজির দাম বৃদ্ধি করায় পরিবহন ব্যয় বাড়বে। শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোয় শিল্পপণ্যের দাম বাড়বে। বিদু্যৎকেন্দ্রে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোয় বিদু্যতের দাম বাড়বে। বিদু্যতের দাম বাড়লে শিল্পপণ্যসহ কৃষি ও সেচে ব্যয় বাড়বে। এভাবে ব্যয় বাড়ার ফাঁদে পড়ে জনগণ নিপীড়িত হবে।

তারা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম কমায় ভারতে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমানো হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার এলএনজি, এলপিজি গ্যাস ব্যবসায়ীদের পকেট ভারী করার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে রেখেছে।

এ সময় অবিলম্বে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাজার দামের অর্ধেকে নামিয়ে আনার আহ্বান জানান তারা। একইসঙ্গে রোববারের হরতালে কোনো প্রকার উসকানি না দিতে সরকারকে হুশিয়ার করা হয়।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সিপিবির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
Please enter your name here

10 + 13 =