টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল ২০০৩ সালে। ইংল্যান্ডেও টেস্ট খেলেছিল নয় বছর আগে। আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কারণে দীর্ঘ ১৭ বছর পর আবার অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলার সুযোগ মিলতে যাচ্ছে টাইগারদের। কিন্তু ইংল্যান্ড কবে আমন্ত্রণ জানাবে সেটা জানা নেই। অনেক হা-হুতাশের পর এই প্রথমবারের মতো ভারতে পূর্ণাঙ্গ সফরে গিয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু সেখানে টেস্টে যে পারফরম্যান্স, তাতে ভারতও ভবিষ্যতে ডাকবে কি-না, সে প্রশ্ন উঠে গেছে। ‘বিগ থ্রি’ ডাকে না বলে আমাদের যে চিৎকার-চেঁচামেচি, তার যৌক্তিকতাও প্রশ্নের মুখে! নূন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো দূরের বিষয়, সোয়া দু’দিনে টেস্ট শেষ হয়ে গেলে অন্যদের ওপর কি দায় চাপানো যায়?
২০০০ সালে অভিষেক টেস্ট খেলে যাওয়ার পরই ভারত সফরে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করে ভারত আমন্ত্রণ জানায়নি বাংলাদেশকে। পরে আরও চারবার বাংলাদেশ সফরে এসেছে ভারত। এখানে অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তাদেরও একটা দায় ছিল। নিজেদের অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য বিসিবিই নিজেদের মাটিতে ভারত সিরিজ আয়োজন করে গেছে। তবে ২০১০ সালের পর থেকে ভারত সফরে যাওয়ার দাবি তোলে বিসিবি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ আয়োজন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না- এ যুক্তি দেখিয়ে বিসিবির দাবিকে আগ্রহ্যই করেছে বিসিসিআই।
তবে ২০১৪ সালে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে বিসিবি। তাছাড়া ২০১৫ সালে ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়, টি২০ বিশ্বকাপ, নিদাহাস ট্রফি, এশিয়া কাপে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বী দিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০১৫ সালের নভেম্বরে এন শ্রীনিবাসন আইসিসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে গেলে ‘বিগ থ্রি’র দাপট কমে যায়। সে ধারাবাহিকতাতেই ২০১৭ সালে একটি টেস্ট খেলার জন্য ভারত সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। হায়দরাবাদের সেই টেস্টে ২০৮ রানে হারলেও খেলা পঞ্চম দিনে গড়িয়েছিল। সেটাই ছিল একমাত্র প্রাপ্তি।
সদ্যসমাপ্ত তিনটি টি২০ ও দুটি টেস্টের সিরিজটি ছিল ভারতের মাটিতে প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ সিরিজ। নানা দিক বিবেচনাতেই সিরিজ ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের অবহেলার জবাব দেওয়ার পাশাপাশি পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়ার একটা মোক্ষম সুযোগ ছিল। কিন্তু এমন একটি সফরে যাওয়ার আগে কি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা? সাকিব হয়তো-বা তার শাস্তির ব্যাপারে আঁচ করতে পেরেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার ভারত সফরে যাওয়া হচ্ছে না। কিন্তু তিনি সঠিকভাবে বিষয়টি সামাল দিতে পারেননি।
তার নিষেধাজ্ঞার খবরে পুরো বাংলাদেশ দল মুষড়ে পড়েছিল। অবশ্য এখানে কিছুটা দুর্ভাগ্যও আছে। ভারত রওনা হওয়ার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় এলো সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর। ক’দিন সময় পেলে হয়তো বিষয়টা সামলে ওঠা যেত। তবে এখানে সবচেয়ে বড় দায় অবশ্যই বিসিবির। দলের অধিনায়কের ওপর এত বড় শাস্তি নেমে আসছে, আর তারা সেটি ঘুনাক্ষরেও টের পাবে না- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
অসমর্থিত সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে আইসিসির সভায় সাকিবের বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল বিসিবি সভাপতিকে। সে সভা থেকে ফিরেই তিনি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারতেন। সাকিব না থাকলে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে, সে পরিকল্পনা তিনি করে ফেলতে পারতেন। সাকিব ছাড়া অতীতে বাংলাদেশ দল তো খেলেছে। কিন্তু এবারের ঘটনা পুরো দলকে মানসিকভাবে ধসিয়ে দিয়েছে।
ক্রিকেটারদেরও দায় আছে। প্রস্তুতি শিবিরে অংশ নিয়েও দল ভারতে রওনার চার দিন আগে তামিম ইকবাল জানিয়ে দিলেন, পারিবারিক কারণে তিনি যেতে পারবেন না। অথচ বিশ্বকাপের পর শ্রীলংকায় ওয়ানডে সিরিজ শেষে তিনি লম্বা বিরতি নিয়েছিলেন শুধু ভারত সফরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে। হঠাৎ করে তার সরে যাওয়াটাও দলের ওপর বড় আঘাত ছিল। পরিবারের প্রয়োজনে মানুষ খেলার মাঝখানেও সরে যায়। কিন্তু এসব সামাল দেওয়ার মতো দক্ষতা এখনও অর্জন করতে পারেনি বিসিবি।
তার ওপর সিরিজে একটি ছিল গোলাপি বলে। লাল বলের তুলনায় এ বলে সুইং অনেক বেশি। গোলাপি বলের জন্য আরও ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু হয়েছে এর উল্টো। কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট খেলতে নেমে গেল তারা। এসবের ফলাফল ‘নগ্নভাবে’ ফুটে উঠেছে মাঠের খেলায়। তাই অন্যদের দোষারোপ করা বাদ দিয়ে পেশাদার কাঠামো গঠন করে দলের পারফরম্যান্স উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত বিসিবির।