প্রসবের পর অজ্ঞান মায়ের কোল থেকে সদ্যোজাত শিশুটিকে নিয়ে ব্রিজের ওপর থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে চরের কাদাপানিতে ছুড়ে ফেলে দেয় তার শ্বশুর কার্তিক মণ্ডল। শিশুটি ছিল কন্যাসন্তান ও অসুস্থ তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার নামে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নির্মমভাবে ছুড়ে ফেলা হয়।

শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার ও পরে সাতক্ষীরা হাসপাতালে তার মৃত্যুর পর অনুসন্ধানে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে শিশুটির মা-বাবাসহ অন্যদের পরিচয়ও মিলেছে।

সোমবার রাতের কোনো এক সময় আশাশুনির কুল্লা গুনাকরকাটি ব্রিজের ওপর থেকে ছুড়ে ফেলা শিশুটি গ্রামবাসীর নজরে এলে মঙ্গলবার সকালে আঘাতে মাথা থেঁতলানো নবজাতককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন কুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাসেত আল হারুন। বিষয়টি থানায় জানালে আশাশুনি থানা পুলিশ শিশুটিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে।

এদিন দুপুরে ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মারা যায় শিশুটি। এরপর থেকে শুরু হয় শিশুটির পরিচয় জানার চেষ্টা। এ ঘটনা নিয়ে দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

দৈনিক যুগান্তর ও স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ও গ্রামবাসীর অনুসন্ধানে জানা গেছে, কন্যাশিশুটির মায়ের নাম দীপিকা মণ্ডল। তার স্বামীর নাম মৃন্ময় মণ্ডল। মণ্ডলের বাবার নাম রাম কার্তিক মণ্ডল। আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামে তাদের বাড়ি।

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে দীপিকা ছিলেন আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারের জনসেবা ক্লিনিকের কেয়ারে। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তাকে ভর্তি করা হয় ওই ক্লিনিকে। সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সোমবার সন্ধ্যায় তিনি জন্ম দেন একটি কন্যাসন্তানের। আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের আগেই জানা যায় শিশুটি কন্যাসন্তান।

গ্রামবাসী জানান, সন্তানটি কন্যা হলে তাকে ঘরে রাখা হবে না। এমনকি প্রয়োজন হলে শিশুটির মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছিল কার্তিক মণ্ডলের পরিবার।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, প্রসবের পর মা দীপিকা মণ্ডল যখন অচেতন তখনই তার কাছ থেকে সদ্যোজাত শিশুটিকে চিকিৎসার নাম করে নিয়ে যায় দীপিকার শ্বশুর কার্তিক মণ্ডল। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন ওই ক্লিনিকের সেবিকারা।

তারা বলেন, রাতে মেয়েদের পক্ষে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে বিবেচনায় দীপিকার শ্বশুর ক্লিনিকে চলে আসেন। পরে তিনিই শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।

সেবিকারা আরও জানান, এর পরের ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। অপরদিকে জ্ঞান ফেরার পর দীপিকা তার সন্তানকে খুঁজতে থাকেন। এ সময় তাকে বলা হয়, চিকিৎসার জন্য তাকে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দীপিকা বলেন, আমি আমার সন্তানের মুখ দেখতেও পারিনি।

অনুসন্ধানে এসব তথ্য আসার পর তা পুলিশের কাছে পৌঁছায়। এমনকি ফেসবুকে দীপিকা মণ্ডল ও তার শাশুড়ি উর্মি মণ্ডলের ছবি ও কথা ভাইরাল হয়।

এতে দীপিকার শাশুড়ি উর্মি মণ্ডল জানান, তার স্বামী কার্তিক শিশুটিকে নিয়ে গেছে। এর পরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবহিত নন।

অনুসন্ধানে এসব তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম কবির জানান, আমি এসব তথ্য সংগ্রহ করেছি। এ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কার্তিক মণ্ডল ও তার ছেলে মৃন্ময় মণ্ডল দুজনেই দর্জির কাজ করেন। তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

ওসি জানান, এ বিষয়ে কুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাসেত আল হারুন ৩০২ ধারায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে একটি মামলা দিয়েছেন। শিশুটির ডিএনএ নমুনা রাখা হয়েছে। অচিরেই আসামিরা ধরা পড়বে।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten − six =