ঢাকা ওয়াসার ৩৪টি এলাকার পানি পরীক্ষা করার পর আট এলাকার পানির নমুনায় দূষণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাটের পানিতে মিলেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। কিছু কিছু এলাকার ওয়াসার পানিতে পাওয়া গেছে মলের জীবাণু। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য মিলেছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও আইসিডিডিআরবির প্রতিনিধির সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হয়। বুধবার এই প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে জমা দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আগামী রোববার হাইকোর্টে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
ওয়াসা বারবার তাদের পানি সুপেয় দাবি করলেও তা সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এমন বাস্তবতায় গত ২১ মে ঢাকার ৩৪ জায়গার পানি পরীক্ষার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এজন্য আইসিডিডিআরবি, বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসোলেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সমন্বয়ে গঠন করে দেওয়া হয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। ওইদিন আদেশে হাইকোর্ট চারটি উৎস (বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ভূগর্ভস্থ ও ভূমিস্থ), ১০টি বিতরণ জোন (যা মডস জোন নামে পরিচিত) এবং গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ঝুঁঁকিপূর্ণ ও দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে বলেন। একই সঙ্গে আইসিডিডিআরবি, বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসোলেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে ওয়াসার পানির ওই নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয়। আদেশে প্রতিটি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার টাকা খরচ ধরে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ওয়াসাকে দিতে বলা হয়। আর স্থানীয় সরকার সচিবকে বলা হয় ওয়াসার কাছ থেকে এই টাকা আদায় করে দিতে। পানি পরীক্ষার জন্য আদালতের নির্দেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটিকে ২ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহŸায়ক করে আদালতের নির্দেশে গঠিত ওয়াসার পানি পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের (মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট) চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র বিজ্ঞানী মনিরুল আলম ও বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবিএম বদরুজ্জামান।
কমিটির পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, আটটি নমুনায় মিলেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। রয়েছে মলের জীবাণুও। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাটের পানিতে। শুকনো মৌসুমে পাওয়া যায় উচ্চমাত্রার অ্যামোনিয়া। ক্ষতিকর এসব ব্যাকটেরিয়া রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ঢাকার অন্য এলাকার পানিতে কোনো ধরনের দূষণ রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার পরামর্শও দিয়েছে কমিটি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের জানান, আদালতের আদেশে গঠিত কমিটি ওয়াসার পানি পরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আগামী রোববার এই প্রতিবেদন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হবে।
এর আগে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি পান করে। ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসগুলোতে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ১৩ শতাংশ পানিতে রয়েছে আর্সেনিক। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ। এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে সে প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। এরপর ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও আইসিডিডিআরবির প্রতিনিধির সমন্বয়ে ওই কমিটি গঠিত হয়। এরপর ওই কমিটিকে ২০১৯ সালের ২১ মে পানি পরীক্ষার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ওয়াসার প্রতিবেদন অনুসারে, অভিযোগের তালিকা বিশ্লেষণ করে যেসব এলাকায় ময়লা পানি পাওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়, সেসব এলাকা হচ্ছে যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মুগদা, রাজারবাগ, কুসুমবাগ, জুরাইন, মানিকনগর, মান্ডা, দোলাইরপাড় ও মাতুয়াইল, ভাগলপুর, লালবাগ, বকশীবাজার, শহীদনগর, জিগাতলা, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ভূতের গলি, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, মণিপুর, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর, মহাখালী, তেজগাঁও, সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নয়াটোলা, রামপুরা, মালিবাগ, পরীবাগ, কদমতলী, দনিয়া, শ্যামপুর, রসুলবাগ, মেরাজনগর, পাটেরবাগ, শনির আখড়া, কোনাপাড়া, মুসলিমনগর, বাড্ডা, আফতাবনগর, বসুন্ধরা, ভাটারা, উত্তরা, খিলক্ষেত, ফায়েদাবাদ, মোল্লারটেক, রানাভোলা, কাফরুল, কচুক্ষেত ও পল্লবী।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 − fifteen =