তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে অব্যাহত থাকতে পারে, সে জন্য প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছি। কিন্তু আমরা কৃষিপ্রধান দেশ, আমাদের কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি খাতের জন্যও ‘বিশেষ উদ্যোগ’ নেয়ার কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করবে। শুধু কৃষি খাতের জন্যই এই ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ফান্ড আমরা তৈরি করব।’
কেবল গ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিরাই এই তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তারা কৃষি, ফুল-ফল, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম- ইত্যাদি উৎপাদনে এখান থেকে সহায়তা পাবেন। যাতে করে কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা, শুধু এই কৃষি খাতে দিচ্ছি। যাতে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।’
পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বীজ ও চারা বিতরণের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।
কৃষি উৎপাদন যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সে জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে সারে ভর্তুকি বাবদ ৯০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে বোরো ধান উঠবে, কৃষক যেন এই ফসলের ন্যায্য দাম পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গতবছরের চেয়ে বেশি ধান চাল ক্রয় করবে। দুই লাখ মেট্রিক টনের বেশি ক্রয় করবে, সেই উদ্যোগটা নেয়া হয়েছে।’
ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে যান্ত্রিকীকরণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আরও ১০০ কোটি টাকা এই খাতে বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আরেকটা উদ্যোগ চলমান রয়েছে। কেউ পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদাসহ মসলা জাতীয় কিছু উৎপাদন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্র ৪% সুদে ঋণ দেয়া হয়। এটাও অব্যাহত থাকবে।’
করোনাভাইরাসের এই মহামারির কারণে বিশ্বে ‘মারাত্মক খাদ্যাভাব’ দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করলেও বাংলাদেশ পরিকল্পনা নিয়ে উৎপাদন বাড়াতে পারলে অন্যদেরও সহায়তা করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে। আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা কিন্তু নিজেদের চাহিদা পূরণ করেও অনেককে সাহায্য করতে পারব; যদি আমরা যথাযথভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে পারি। সেটা আমাদের করতে হবে।
‘যাতে আমাদের দেশের মানুষ কষ্ট না পায়, আবার দরকার হলে আমরা অনেক মানুষকে বা অনেক দেশকে সহযোগিতা করতে পারি বা রপ্তানি করতে পারি, সেভাবে আপনারা উৎপাদন বাড়াবেন। কারও এতটুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিল্প কৃষি সব ক্ষেত্রেই আমরা ব্যাপকভাবে প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি, কারণ আমরা জানি, আমাদের অনেক উন্নয়নের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু সব থেকে বড় কথা, এখন মানুষ বাঁচানো এবং মানুষের জীবনযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া।’
সে জন্য কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে কামার-কুমার, তাঁতি-জেলে- সব শ্রেণির মানুষকে সহযোগিতা করতে সরকার ‘সদা প্রস্তুত’ বলে জানান সরকারপ্রধান। নভেল করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ বিতরণে কেউ দুর্নীতি করলে তাকে ক্ষমা করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘একটা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা চলছে। এই সময় মানুষকে সাহায্য দেয়ার জন্য আমরা যেই খাদ্যদ্রব্য দিচ্ছি চাল বা যা আমরা দিচ্ছি, সেখান থেকে কেউ যদি দুর্নীতি করার চেষ্টা করে, তাহলে এটা কোনো দিন ক্ষমার যোগ্য না এবং এটা আমরা ক্ষমা করব না।’
তিনি বলেন, ‘যাদের আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে এই সামান্য দুই-একটা ঘটনা আমাদের অত্যন্ত কষ্ট দেয়। এটা খুবই একটা ঘৃণ্য কাজ। কাজেই কেউ এটা করবেন না, সেটাই আমি বলব। এ ধরনের দুর্নীতি আমরা কোনো দিন বরদাস্ত করব না।’
চুরি করলে কেউ ছাড় পাবে না বলে হুঁশিয়ার করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, কয়েকটা এ ধরনের খবর বেরিয়েছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বা দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে দেয়ার জন্য যে খাদ্যশস্য দেয়া হয়েছে, যে চাল দেয়া হয়েছে সেখান থেকে যারা দুর্নীতি করার চেষ্টা করেছেন এবং কিছু ধরা পড়েছেন, আশা করি কেউ যদি এমন করেন, সবাই ধরা পড়বেন। তাদের কিন্তু কোনো ক্ষমা নেই। যদি প্রয়োজন হয় সেখানে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। বিচার পরে দেখা যাবে।’