জীবনের সময়টুকুই একজন মানুষের ইহকালীন মূলধন। যদি তা আখেরাতের কল্যাণের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় তবেই ব্যবসা সফল হবে। আর যদি তা বিনষ্ট করা হয় গুনাহ ও পাপাচারে এবং এ অবস্থায় আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাৎ হয় তাহলে সে হবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বুদ্ধিমান সে-ই, যে নিজের হিসাব নেয়, আল্লাহ তার কাছ থেকে হিসাব নেয়ার আগে এবং গুনাহ ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে তা তাকে ধ্বংসের পথে নেয়ার আগেই।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি গুনাহকে এমন মনে করে, যেন সে কোনো পাহাড়ের নিচে বসে আছে। আর যে কোনো মুহূর্তে পাহাড়টি তার ওপর ধ্বসে পড়তে পারে।’(সহীহ বুখারী ১১/৮৯)। পক্ষান্তরে অনেক মানুষ এমনও আছে, যারা বেপরোয়াভাবে পাপাচারে লিপ্ত থাকে। সে চিন্তাই করে না, কার অবাধ্যতায় সে লিপ্ত! একপর্যায়ে তার শেষ সময়টি এসে যায় এবং তার মৃত্যু হয়-আল্লাহ হেফাজত করুন-অশুভ মৃত্যু!

হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন, তোমরা এমন অনেক কাজে লিপ্ত হও, যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়ে তুচ্ছ। অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এগুলোকেই আমরা সংহারক কর্ম বলে গণ্য করতাম। (সহীহ বুখারী ১১/২৮৩)। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সুন্দর মৃত্যুর জন্য সতর্ক করেছেন।

তিনি ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোনো অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আল ইমরান (৩) : ১০২)। অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করো। (সূরা হিজর (১৫) : ৯৯)। সুতরাং তাকওয়া ও ইবাদতের নির্দেশ মৃত্যু অবধি বলবৎ থাকবে, যেন শুভ অবস্থায় মৃত্যু লাভ হয়।
আমল ও ভয় : হাদিস শরীফে একথাও বলা হয়েছে যে, কিছু মানুষ জীবনভর ইবাদত করে এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। কিন্তু মৃত্যুর নিকটবর্তী সময়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়। ফলে তার মৃত্যু হয় অশুভ অবস্থায়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ব্যক্তি জান্নাতীদের আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে শুধু এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার তাকদীর অগ্রগামী হয় এবং সে জাহান্নামীদের আমলে লিপ্ত হয়ে যায়। অবশেষে তার ঠিকানা হয় জাহান্নাম। (সহীহ বুখারী ১১/৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৬৪৩)।

সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি এত বীরত্বের সাথে লড়াই করছিল যে, সাহাবায়ে কেরাম তা দেখে বিস্ময় বোধ করলেন এবং বললেন, আজ (যুদ্ধের ময়দানে) সে আমাদের যতটা উপকার করেছে আর কেউ তা করতে পারেনি।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তো জাহান্নামী। জনৈক সাহাবী আরজ করলেন, সে যদি জাহান্নামী হয় তাহলে আমাদের মধ্যে আর কে জান্নাতী হবে? একজন বললেন, আমি তার সাথে থাকব এবং দেখব, সে কী করে। তার বর্ণনা- লোকটি লড়াইয়ের একপর্যায়ে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য তলোয়ারের অগ্রভাগ বুকে ঠেকিয়ে তার ওপর ঝাঁপ দিলো এবং আত্মহত্যা করল। এ দৃশ্য দেখে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে? তিনি তখন পূর্ণ ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন।

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই মানুষ এমন আমল করে, যা মানুষের দৃষ্টিতে জান্নাতীদের আমল, কিন্তু (আল্লাহর কাছে) সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত। আবার কেউ এমন আমল করে, আপাতদৃষ্টিতে যা জাহান্নামীদের আমল, কিন্তু (আল্লাহর কাছে) সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
Please enter your name here

14 + 13 =